তর্পণ ।। অ ভি জি ৎ ত র ফ দা র

বারান্দায় ভিজে জামাকাপড় শুকোতে দিচ্ছিল পলা। বেল বাজল। পরপর দু’বার। বিরতি। আবার দু’বার। হাত থেমে গেল। চেনা, ভীষণ চেনা এই বেল বাজানো। কার যেন? ভাবতে ভাবতে দরজা অবধি পৌঁছে গেল পলা। ছিটকিনি নামিয়ে দরজা খুলল। মুখোমুখি। মাঝখানে চৌকাঠ। এবং অনেকগুলো বছর।
কেন এসেছে ও? আজকের দিনটাতেই?

‘আসতে পারি?’

পিছন ফিরল পলা। হাত দিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফা দেখিয়ে দিল। প্রায় নিঃশব্দে দরজা বন্ধ করে, বড় সোফাটার এক কোনায়, সন্তর্পণে, যেন এতটুকুও দাগ না ফেলে বসল রিনি।

পলা ভেতরে চলে গেল। শোওয়ার ঘরে। রণ-র ছবির সামনে দাঁড়াল। কাল রাতেই ছবিটা মুছেছে, চন্দনের ফোঁটা দিয়েছে। ধূপ জ্বালিয়েছিল সকালে। ধূপটা পুড়তে পুড়তে শেষ হয়ে এসেছে, ছাই পড়ছে নিচে। কী মনে হল, ধূপদানিটা সরিয়ে রাখল।

কেন এসেছে ও? কোনও বোঝাপড়া? কোনও না-মেলা উত্তরের সন্ধান? কিন্তু সে তো কবেই চুকেবুকে গেছে!

ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে অগোছালো চুল সমান করতে গিয়ে দেখল হাত কাঁপছে। ড্রয়িংরুমে ঢুকে মুখোমুখি বসল।

‘তারপর? বহুদিন পর দেখা। কেমন আছ?’

‘চলে যাচ্ছে, তোমাদের খবর?’

‘আমার খবর তো শুনেছ নিশ্চয়ই। মিঠিয়া বেঙ্গালুরু, ইঞ্জিনিয়ারিং, থার্ড ইয়ার। পম নরেন্দ্রপুরে। হস্টেলে থাকে।… তোমাদের সেই এনজিও? বারাসত না কোথায় যেন?’

‘বারাসত পেরিয়ে। আরও বড় হয়েছে। পাশের জমিটায় নতুন বিল্ডিং হচ্ছে।… পারলে একদিন এসো।’

পলা কথা খুঁজল। তারপর বলল, ‘কত জায়গাতেই তো যাব ভাবি। হয়ে ওঠে না। সময় পাই না তা বলব না। এখন তো অঢেল সময়। কী জানো তো, ইচ্ছে করে না। কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না, একটা সিনেমা দেখতে ইচ্ছে করে না, ভাল বই পড়তে ইচ্ছে করে না। ইচ্ছে বলে যে কিছু ছিল জীবনে, মনেই পড়ে না।’

1 Comment

  1. Jamal

    Welcome back

Leave a comment