নীল রঙের রাত্রি ।। সুব্রত নিয়োগী

তখন রাত প্রায় আটটা। হাউসিং কমপ্লেক্সের ছোট ছোট ফ্ল্যাটগুলোর জানালায় জানালায় আলো। বাইরে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সঙ্গে দুরন্ত বাতাস। বৃষ্টির বেগ ক্রমশ বাড়ছে। জানালার কাচে সশব্দে ফেটে পড়ছে বৃষ্টির অসংখ্য বড়-বড় ফোঁটা।
মেঘা রান্নাঘরে। সিঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে ছোট ছুরি দিয়ে পমফ্রেট মাছের পেট থেকে নাড়িভুড়ি বের করছিল। গ্যাস আভেনের উপর নন-স্টিক প্যানে জল ফুটে যাচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি তাকে খাবারের ডিশটা তৈরি করে দিতে হবে।
বসার ঘরে চল্লিশ-ঊর্ধ্ব এক যুবাপুরুষ কোলে ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে আছে। ফরসা গালে দু-তিন দিনের বাসি দাড়িতে বেশ ম্যানলি দেখাচ্ছে তাকে। পুরুষটি কি-বোর্ডের বোতাম টিপতে টিপতে গলা উঁচিয়ে বলে ওঠে, “ওয়ান সেকেন্ড মেঘা, দাঁড়াও, ইনবক্সটা চেক করে নিই একটু।”
মেঘা পিছন দিকে না তাকিয়েই বলে, “শল্য, তুমি এখন কোথায় আছ?”
লোকটা কি-বোর্ড থেকে মাথা না তুলে উত্তর দেয়, “কেন, এখন তো আমার কোনও দায় নেই, দায়িত্বও নেই। যেখানে খুশি আমি থাকতে পারি। বলতে পার একেবারে ফ্রি।”
“ড্রিঙ্ক করা কমিয়েছ?”
“না, তা আর পারলাম কই?”
“তবে এসেছ কেন এতদিন পরে? শুধু আমি ডেকেছি বলে?”
“বলতে পার কিছুটা তাই। তোমাকে দেখার একটা লোভ তো ছিলই। একটা মেয়েকে পুরোপুরি চেনা যায় তার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে। মানে বিচ্ছেদ হলে। বিয়েতে তো চেনাই যায় না। প্রায়ই ভুল চেনা হয়ে যায়। তার মাশুল দিয়ে যেতে হয় সারা জীবন। তা ছাড়া আপ্তিকেও কতদিন দেখি না। শুধু জানি, ও হস্টেলে থাকে।”
“দ্যাখো…”
ঘুরে দাঁড়িয়ে কী একটা বলতে যাচ্ছিল মেঘা। তখনই দেখে শল্য নামে পুরুষটি কখন রান্নাঘরে এসে দাঁড়িয়েছে ঠিক তার পিছনে।
মেঘার হাতে মাছ কাটার ধারালো ছুরি রক্তে মাখা।
বৃষ্টি থেমে গিয়েছে। তখনই বাইরের করিডোরে জুতোর আওয়াজ শোনা গেল। পাশের ফ্ল্যাটের দরজা খোলার শব্দ। মুহূর্তের মধ্যে হিন্দি সিনেমার আইটেম সং ভেসে আসে। জোরে মিউজিক চালিয়ে দিয়েছে কেউ।
দু’জনেই চুপ। কেউ-ই আর কথা বলছিল না। শল্য আভেনে ফুটতে থাকা জলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মজা করে বাঁ হাত দিয়ে গ্যাসের নব ঘুরিয়ে আগুনের শিখা বাড়িয়ে দিল।
মেঘা দ্রুত এসে আবার কমিয়ে দিল আগুন, “কী করছ কী! সেই একইরকম রয়ে গেলে?”
লোকটা হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে, “কী রান্না করছ?”
“মাছ।”
“কী মাছ? নিশ্চয়ই পমফ্রেট মাছ নয়?”
“হ্যাঁ, পমফ্রেট-ই।”
“কতদিন পমফ্রেট মাছ খাওয়া হয় না!”
মেঘার ফরসা বুকের মাঝখানে বিভাজিকার উপর একটা হারের লকেট। সেই দিকে তাকিয়ে আছে লোকটা।
মেঘা হাউস কোটের কলার দিয়ে নেকলাইন ঢেকে দেয়। কোমরে বাঁধা আঁটসাঁট বেল্টটা আলগা করে নেয় একটু।
লোকটা সহজ ভঙ্গিতে বলে, “তারপর, হাউ ইজ লাইফ?”
মেঘার মুখে হাসির রেখা। সেই হাসির রেশ নিয়েই বলে, “কী দেখছ?”
“দেখছি, তুমি এতবছরে কতটা পালটেছ।”
রাস্তা থেকে ভেসে আসছে অস্পষ্ট গাড়ির হর্ন। মাঝে-মাঝে ভারী রাস্তা কাঁপিয়ে চলে যায়। লোকটা মেঘার খুব কাছে চলে এসেছে। কেঁপে ওঠে মেঘা সহসা। এখনই হয়তো ছুঁয়ে ফেলবে ওকে।

Subrata Niyogi Books, Latest Bangla PDF, Latest Subrata Niyogi Books, Subrata Niyogi New EBooks, Subrata Niyogi Latest PDF, Famous Writer Subrata Niyogi Books, Subrata Niyogi Latest EBooks, Indian, Bangladeshi E Books, Latest E Books, New EBooks, Latest PDF, New PDF, Free Download Subrata Niyogi Books, Subrata Niyogi Books Collection, Famous Bengali Writer Subrata Niyogi E Books Collection, Bangle PDF Collection, Subrata Niyogi Books. All Credit Goes to Original Uploader. Free Book Download From Here!!!

Leave a comment