প্রথম রিপু ।। অ নি র্বা ণ জা না

অনুপম কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দরদর করে ঘামছিল। আজ প্রথম নয়, সরকারি ডাক্তার বলে প্রায়ই তাকে কোর্টে হাজির হতে হয়। অনুপমের ক্লস্ট্রোফোবিয়া আছে— ঘেরা জায়গায় দমবন্ধ হয়ে আসে। মনটাকে অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য জানালার বাইরের দিকে তাকায় অনুপম। একটা কৃষ্ণচূড়ার ডাল প্রায় জানালা ছুঁয়েছে। সেই ডালে বসে একটা একা কাক ঘাড় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বিভিন্ন অ্যাঙ্গল থেকে অনুপমকে দেখছে আর কা-কা করে ডাকছে। অনুপম কি কারও কাকা হয়? অনুপম তো এক সন্তান! দূর সম্পর্কের এক ভাইপো আছে বটে— জেঠতুতো দাদার ছেলে। কিন্তু সে তো আমেরিকায় থাকে। সে তো সাহেবদের মতো ফরসা আর ভরদুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ডালেই-বা সে বসতে যাবে কেন?
“কী হল, উত্তর দিচ্ছেন না কেন?” ডিফেন্সের উকিলের বাঘা চিৎকারে ভাবনাটা কেটে গেল অনুপমের। আজ যেন একটু বেশিই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখে আসামিদের ঘেরাটোপে মধ্যবয়সি এক পুরুষ বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু-চারটে মোটা সোনার চেন তার শার্টের ওপরের বোতামের পাশ দিয়ে অহেতুক কৌতূহল নিয়ে উকি মারছে। ভদ্রলোক স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেত্রীর স্বামী। এজলাসে সেই জন্য আজ বেশ কিছু ষন্ডাগন্ডা ছেলেপুলেদের ভিড়। এদেরই মধ্যে কেউ হয়তো কাল রাতে কিছুটা অনুরোধ আর বেশিটা ভয় দেখিয়ে ফোন করেছিল।
এরকম ফোন অবশ্য প্রায়ই অনুপমকে পেতে হয়। অস্বীকার করে লাভ নেই, হাত-পা একটু পেটের ভেতর সেঁধোয় বটেই। কিন্তু অভিজ্ঞতায় জানে, যা সে রিপোর্টে লিখেছে তার বাইরে বলতে গেলে বিপদই বেশি। এ যেন দু’দিকে ধার দেওয়া তলোয়ার।
উকিলের প্রশ্নটার কোনও উত্তর হয় না। সরকারি হাসপাতালের প্রতিটা জায়গায় ফরেনসিক অর্থাৎ পোস্ট মর্টেম করায় পারদর্শী ডাক্তারদের পোস্টিং দেওয়া সম্ভব নয়। তাই রোটেশন পদ্ধতিতে অন্য ডিপার্টমেন্টের ডাক্তার দিয়ে পোস্ট মর্টেম করিয়ে নেওয়া হয়। নাহ, অস্বীকার করে লাভ নেই যে, অনুপমের পোস্ট মর্টেম করার মতো কোনও ডিগ্রি নেই।
বিরোধী পক্ষের উকিল প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে কথাটা লুফে নেয়, “ইওর অনার, এঁর পোস্ট মর্টেম করার কোনও যোগ্যতাই নেই আর দিয়ে দিয়েছেন রিপোর্ট! ওঁর রিপোর্টের ওপর নির্ভরকরে যে-রায় দেবেন, তাতে অহেতুক এক নিরপরাধ মানুষ শাস্তি পেতে পারে,” গলাটা নামিয়ে চশমাটা নাকের ওপর ঠিকঠাক বসাতে বসাতে জজসাহেবের দিকে তাকিয়ে উকিলবাবু বলেন, “দেখবেন স্যার, ওঁর স্বীকারোক্তিটা যেন লেখা হয়।”
পি পি সাহেব অর্থাৎ সরকারি উকিলের দিকে তাকায় অনুপম। কোনও প্রতিবাদ নেই। আর অদ্ভুত ব্যাপার, উনিও জানালার বাইরের কাকটাকে দেখছেন। অনুপমের মনে হল, ‘কাকা’ রহস্যটা ভেদ করা গেছে। কাকটা এতক্ষণ ওঁকেই কাকা বলে ডাকছিল। ওঁর রংটাও বেশ চাপা ধরনের, কাকা ভাইপোর মিল তো থাকবেই।
এজলাসে কোথাও মেয়েটার বাবাকে চোখে পড়ে না। দূরের জিনিস ইদানীং কম দেখছে অনুপম।

Anirban Jana Books, Latest Bangla Pdf, Latest Anirban Jana Books, Anirban Jana New Ebooks, Anirban Jana Latest Pdf, Famous Writer Anirban Jana Books, Anirban Jana Latest Ebooks, Indian, Bangladeshi Ebooks, Latest Ebooks, New Ebooks, Latest Pdf, New Pdf, Free Download Anirban Jana Books, Anirban Jana Books Collection, Famous Bengali Writer Anirban Jana Ebooks Collection, Bangla PDF Collction, Anirban Jana Books. All Credit Goes to Original Uploader. Free Book Download From Here !!!

Leave a comment